রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩)

রোযনামচার পাতা

রোযনামচার পাতা - ২

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

***

শুক্রবার ১৭-৪-৩৯ হি.

রাত হয়েছে যথেষ্ট। আমার চারপাশে এখন ঘুমের সান্ত্রী-সেপাইদের আনাগোনা। কিন্তু আমিও হেরে যাওয়ার পাত্র নই। ঘুমের/সেপাইদের সঙ্গে লড়াই করে রোযনামচা আজ লিখে ছাড়বোই।

কিন্তু একি! ঘুমে যে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে! সমস্যা নাই। এটাও তো একটা রোযনামচা!

সম্পাদক আলবৎ! তবে কিনা ঘুণে খাওয়ার মত ঘুমে খাওয়া রোযনামচা!!

তুমি লিখেছো ‘আমার চারপাশে এখন ঘুম-পরিদের আনাগোনা’ শুনতে বেশ মনে হচ্ছে, না! কিন্তু কথা হলো, এরপর তুমি লিখেছো, লড়াই করার কথা। পরিদের সঙ্গে লড়াই, ছি!! এবার বুঝতে পেরেছো, কেন সম্পাদনা করা হয়েছে এবং কীভাবে সম্পাদনা করতে হয়!!

শনিবার ১৮-৪-৩৯ হি.

খাতাটা খুলে মাত্র রোযনামচা লিখতে শুরু করেছি, এমন সময় খবর পেলাম, আমাদের ভাই আরীফ গুরুতর অসুস্থ। গিয়ে দেখি, খুব শ্বাসকষ্ট! দু‘আ করতে লাগলাম, হে আল্লাহ, আমার ভাইকে তুমি সুস্থ করে দাও। হুযূর এসে অবস্থা দেখে বললেন, হাতপায়ে তেল মালিশ করে দেখো, আল্লাহ চাহে তো আসান হয়ে যাবে।

বিসমিল্লাহ বলে মালিশ শুরু করলাম। হঠাৎ মনটা কেমন করে উঠলো! এ অবস্থা তো এখন আমারও হতে পারতো! আল্লাহ সবাইকে সুস্থ রাখুন, নিরাপদ রাখুন, আমীন।

তাহসীনুল হক

***

 

(তারিখ নেই কেন?!)

আজ শুক্রবার। বরকতময় দিন। এই বরকতময় দিনে এশার নামাযের পর একটি মৃত্যুসংবাদ শুনতে হলো। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। আমরা কেউ অশ্রুসজল চোখে, আর কেউ অশ্রুসিক্ত হৃদয়ে মরহূমের জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করলাম। তিনি আমাদের উস্তাদ মাওলানা আছিম ছাহেবের চাচা এবং অভিভাবক। অনেকবার তিনি মাদরাসায় এসেছেন। তাঁর সবকিছু ছিলো সুন্দর। আমাদের হুযূর এবং ভাইগণ ছোট অবস্থায় এতীম হয়েছিলেন। এই মরহূম চাচাই হুযূর এবং তাঁর ভাইদের আপন সন্তানের মত লালন-পালন করেছেন। তিনি আজ দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে গেলেন। আল্লাহ তাঁকে কবরে শান্তিতে রাখুন, আমীন। সাজ্জাদুর-রহমান

***

 

বৃহস্পতিবার ২-৪-৩৯ হি.

হুযূর আজ আরাকানসংখ্যার সম্পাদকীয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। হুযূর বললেন, শিরোনামটা দেখো, কাঁটার আঘাতে ফুটলো ফুল! সম্পাদকীয়টির মূল বার্তা শিরোনামের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। অর্থাৎ বিপদে দুর্যোগে, বা কারো দেয়া কষ্টের মুখে যদি তুমি ছবর করতে পারো তাহলেই তুমি আল্লাহর কাছ থেকে অনেক আজর ও বিনিময় পাবে।

... কাঁটার আঘাত পেয়ে হাতটা আর সরালো না। অর্থাৎ কাঁটার আঘাতের সঙ্গে এমন একাত্মতা হয়েছে এবং এমন একটা আত্মহারা অবস্থা তাকে আচ্ছন্ন করেছে যে, হাতটা সারিয়ে নেয়ার কথা মনেই আসেনি। এটা হলো কষ্টের চূড়ান্ত অবস্থা।

‘.... ফোঁটা ফোঁট রক্তের সঙ্গে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু ঝরলো’ অর্থাৎ ভিতরে বাইরে উভয় দিক থেকেই কষ্টটা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করেছে। এ অবস্থা যখন হয় তখনই আসমানের দান নেমে আসে।

হুযূর বললেন, পুরো বক্তব্যের মধ্যে এই যে প্রচ্ছন্নতা এটাই সাহিত্য। যদি কষ্টের কথা এবং কষ্টদানকারীর কথা খোলামেলা ও প্রত্যক্ষভাবে বলা হতো তাহলে সেটা মর্মস্পর্শী সাহিত্য হতো না, হতো ঘটনার স্থূল বিবরণ!

হুযূর আরো বললেন, লেখাটির আরেকটি সৌন্দর্য হলো, শুরু হয়েছে কাঁটা শব্দ দিয়ে, শেষ হয়েছে ফুল শব্দটি দিয়ে, যেন এদিকে ইঙ্গিত যে, কাঁটার আঘাতে ছবর করার ফল হলো ফুলের সুবাস লাভ করা।

এভাবে হুযূর আমাদের শিক্ষা দিলেন যে, পুষ্পের লেখাগুলো এভাবে পড়তে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন, আমীন।

খালিদ, মাদরাসাতুল মাদীনাহ

 

একটি সুন্দর অনুভূতি

মুহম্মদ ছাওবান

১-৪-৩৯ হি,

বিরতিতে বাসায় এলাম; আব্বু-আম্মুর সঙ্গে দেখা হলো, তারা খুব খুশী হলেন, আমারও আনন্দ হলো। ...

ফেনীর হুযূর বলেন, প্রত্যেক সূচনার সময় মানুষ নিজেকে নতুন করে সংশোধন করার সুযোগ লাভ করে...

মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম। এবার বিরতির পর নতুন পর্বের সূচনায় নিজের সমস্ত ত্রুটি সংশোধন করার চেষ্টা করবো, একটি সুন্দর অনুভূতি

২৮এর পর

যাতে একটি সুন্দর নতুন জীবন শুরু করতে পারি।

মনের কথাটা আম্মুকে বললাম। আম্মু খুশী হলেন, বললেন, শুধু চিন্তা নয়, কাজেও পরিণত করা উচিত। আম্মুর কাছে দু‘আ চাইলাম। তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে মমতায় সিক্ত করে দু‘আ দিলেন।

 

নিজের দোষের কথা ভাবি

আমরা এবং আমি সবসময় অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াই। আমার নিজের কি কোন দোষ নেই? আমি কি দোষ-মুক্ত, পবিত্র, পরিচ্ছন্ন জীবনের অধিকারী?

নিজের দোষের কথা আমি, আমরা কেন ভাবি না! নিজের দোষ সংশোধনের চেষ্টায় কেন আত্মনিয়োগ করি না! জ্ঞানিগণ বলেছেন, আত্মসমালোচনাই হলো আত্মোন্নয়নের পথ।

আজ জোসনারাতে, আকাশের ভরা উজ্জ্বল চাঁদটার দিকে তাকিয়ে এ চিন্তাটা অনেক্ষণ আমাকে অস্থির করে রাখলো। আমি যদি চাঁদের সৌন্দর্য ভুলে তার কালো দাগগুলোর কথাই শুধু ভাবি তাতে চাঁদের কী ক্ষতি, আমার কী লাভ! চাঁদের কলঙ্কের চেয়ে তার জোসনার মূল্য তো অনেক বেশী। মানুষ সম্পর্কেও আমাদের চিন্তা ও ভাবনা এমনই হওয়া উচিত। মানুষের দোষের পরিবর্তে গুণের কথা ভাববো, আর নিজের গুণের পরিবর্তে ভাববো দোষের কথা, দোষ সংশোধনের  

        কথা।

রবিউল ইসলাম বিন আবুল কাশেম ১৩/৪/৩৯ হি.

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা