রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩)

কাশগর ও কায়রো

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ তামাশা আর কতদিন!?

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

নিরাপত্তাপরিষদ আবার আলোচনায় বসছে। এটা কততম আলোচনা তা এখন মনে করতে পারছি না; তবে এর আগের প্রতিটি আলোচনাই সমাপ্ত হয়েছে অসহায় নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমানের সঙ্গে নির্মম রসিকতার মাধ্যমে।

এবার অবস্থা একটু ভিন্ন। এবারের রসিকতা আগেই প্রকাশ করা হয়েছে। বৈঠক শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়নি। বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাসঙ্কট নিরসনে সহায়ক ভূমিকা পালন করার জন্য জাতিসঙ্ঘ মহাসচীবের একজন বিশেষ দূত নিয়োগের সিদ্ধান্ত হতে পারে। ভাবুন, ওদিকে পুরো ‘রাখাইন’ জ্বলে পুড়ে সাফ, এদিকে নিযুক্ত হতে চলেছেন সঙ্কট নিরসনে সহায়ক ভূমিকা পালন করার জন্য একজন দূত!

এ ছাড়া যৌনসহিংসতাবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত প্রমিলা প্যাটেন রোহিঙ্গা-নারিদের উপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তাবাহিনীর ভয়াবহ যৌনসহিংসতার তথ্য তুলে ধরবেন।

ওদিকে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) বাংলাদেশে পালিয়ে আসা যৌন-নির্যাতনের শিকার ২৯জন নারীর মর্মবিদারক বিবরণ লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে। তাতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সেনারা পরিকল্পিত ভাবে রোহিঙ্গাজনগোষ্ঠীর উপর ‘যৌনসন্ত্রাস’ চালিয়েছে।

কী আর বলবো, আমাদের একটি আকুতি অন্তত শোনো হে বিশ্ববিবেক! ঘায়ে যদি মলমের প্রলেপ দিতে না পারো ঘা খুঁচিয়ে আর ব্যথা বাড়িয়ো না।

অবশ্য মনে করার কোন কারণ নেই যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বসে আছে! মুসলিম বিশ্বের সবাইকে পিছনে ফেলে সবার আগে পোপ বিবৃতি দিয়েছেন, ‘রোহিঙ্গারা মুসলিম পরিচয়ের কারণে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ...’ সবাই আশায় বুক বাঁধলো। আমরা পড়ে গেলাম বিস্ময়ের ঘোরে! কী হচ্ছে তাহলে?! ঘোর কাটতে অবশ্য সময় লাগলো না। তিনি মিয়ানমার গেলেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি হলেন, কারো সঙ্গে দেখা করলেন, কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। যা করলেন না তা হলো, রোহিঙ্গা শব্দটির শুধু মুখে একবার উচ্চারণ!

ওখান থেকে এলেন বাংলাদেশে। বিমানবন্দরেই চেহারা পরিবর্তন! বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বললেন, ‘রোহিঙ্গাসঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়-কে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

নিজে যাবেন কেন রোহিঙ্গাশিবিরে অসহায় মানুষগুলোর অবস্থা চোখে দেখার জন্য!! তিনি চোখ নিয়ে বসে থাকলেন ঢাকায়, ওখান থেকে কয়েকজন ধরে এনে দেখিয়ে দেয়া হলো, ‘এদের বলা হয় রোহিঙ্গা’। আমরা অবাক হলাম না। তিনি ফিরে গেলেন, বিমানেই সাংবাদিকদের বললেন, মিয়ানমারে তিনি রোহিঙ্গা শব্দটি কেন উচ্চারণ করেননি, তাহলে তো আলোচনার সুযোগই বন্ধ হয়ে যেতো! আমি তো তাহলে আমার বার্তা তাদের কাছে দিতে পারতাম না!

এবার বুঝুন, একশ কোটি মানুষের ধর্মগুরু কতটা সমঝে চলেন গণহত্যার নায়কদের!! এরপর যদি বলি, এটা তো নিছক তামাশা, ভুল হবে?! হলে বলবো না।

বৃটিশ পার্লামেন্টও বসে নেই। রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর পরিচালিত সহিংসতাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যা আখ্যায়িত করে জবরদস্ত এক রিপোর্ট তৈয়ার করেছে। তাতে নতুন যে কথাটি বলা হয়েছে তা হলো, ‘এই গণহত্যার কথা তুলে ধরতে বৃটিশসরকারের ভূমিকা ছিলো হতাশাজনক। এমনকি ঘটনার আইনি বিশ্লেষণ করতেও ব্যর্থ হয়েছে বৃটেন। রিপোর্ট শেষ হয়েছে এভাবে, ‘এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’

বলুন তো, এটা তামাশার কততম সংস্করণ!!

আরো আগে নভেম্বরের শুরুতে বৃটিশ পার্লামেন্টে এক আলোচনায় বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার সুযোগে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বেড়েই চলেছে। আলোচনার শিরোনাম ছিলো ‘নীরব জাতিগত নির্মূলের শিকার রোহিঙ্গা মুসলিমরা’।

আরেকটি বড় তামাশা করেছে স্বয়ং মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল, যার প্রধান হচ্ছেন, গণতন্ত্রের নেত্রী এবং রাষ্ট্রীয় পরামর্শক অং সান সূ চী। শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য ঘোষণা করে তারা ‘পিস ইন মিয়ানমার’ নামে এক সম্মেলন করেছে। তাতে সর্বধর্মের প্রতিনিধিরা একত্র হয়ে শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু সেখানে উচ্চারিত হয়নি, রোহিঙ্গা-জনগোষ্ঠীর নাম।

সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয় ইয়াঙ্গুনের এক ফুটবলমাঠে মোমবাতি প্রজ্বলন ও আন্তধর্মীয় প্রার্থনার মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমরাও পিছিয়ে নেই। সিদ্ধান্ত নিয়েছি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করতে হবে রোহিঙ্গাশিবির। কাঁটাতারের অভিজ্ঞতা তো হয়েছে আমাদের সীমান্তে। সে অভিজ্ঞতাই কি আমরা কাজে লাগাতে চাচ্ছি!? আসলে আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য। *

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা