আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

আল কুদসসংখ্যা (বিশেষ).

হেফাজতে ইসলামের বিশাল মিছিল-সমাবেশ

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম উম্মাহর পবিত্র নগর বাইতুল মাকদিসকে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের রাজধানী বলে স্বীকৃতি ঘোষণা করতে পারেন, এরূপ জল্পনা-কল্পনায় মুসলিম বিশ্ব যখন অস্থির তখন বাংলাদেশের তাওহীদপ্রাণ জনতার মাঝেও উত্তাল ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ঈমান ও তাওহীদের ডাকে সাড়া দিয়ে  বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রথম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে হেফাযতে ইসলাম। এক বিবৃতিতে হেফাফতে ইসলাম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, মুসলিম উম্মাহ সবকিছু বরদাশত করতে পারে, কিন্তু ইসলামের প্রথম কেবলা মসজিদুল আকছা এবং পবিত্র নগর বাইতুল মাকদিসকে নিয়ে কোন ছিনিমিনি খেলা বরদাশত করতে পারে না। বিবৃততে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, আগুন নিয়ে খেলা করা থেকে বিরত থাকুন। জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন।

মুসলিমবিশ্বের নেতৃবৃন্দের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম তার বিবৃতিতে বলেছে, মুসলিম বিশ্বের কর্তব্য এখন থেকেই প্ররিস্থিতির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং সর্বশক্তি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে তার অশুভ উদ্দেশ্য থেকে বিরত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা। বিশেষ করে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ও আই সি) কে এখনই ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

***

যা আশঙ্কা করা গিয়েছিলো, ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত একটায় (গ্রীনিচ মান অনুযায়ী বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায়) তাই ঘটে গেলো। আরববিশ্ব ও মুসলিম বিশ্বের প্রবল বাধা ও হুঁশিয়ারি ্উপেক্ষা করে মার্কিন পেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাইতুল মাকদিস (জেরুসালেম)কে ইসরাইলের চিরস্থায়ী রাজধানী বলে ঘোষণা করেছেন এবং তেলআবীব থেকে  জেরুসালেম মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। মুসলি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের তাওহীদী জনতাও যুক্তরাষ্ট্রের এ হঠকারী সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। হেফাজতে ইসলাম সঙ্গে সঙ্গে কর্মসূচী ঘোষণা করে এবং শুক্রবার দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। সারা দেশে হেফাজতের ইসলামের নেতা-কর্মিদের বিশেষভাবে এবং সাধরণ মুসলিম জনতাকে আমভাবে ঈমানের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশে শরীক হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামও যুক্তরাষ্ট্র-কর্তৃক বাইতুল মাকদিসকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার প্রতিবাদে শুক্রবার বাদজুমা বাইতুল মুকাররাম উত্তর গেইটে বিক্ষোভসমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করেছিলো। ঘোষণা অনুযায়ী বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ থেকে হেফাজত- নেতাকর্মী ও তাওহীদী জনতার সম্মিলিত বিশাল মিছিল  বের হয়। মিছিলটি পুরানা পল্টন ও দৈনিক বাংলার মোড় ঘুরে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মাওলানা মাহফূযুল হক, ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আব্দুর-রব ইউসুফী ও অন্যান্য। সমাবেশে বিভিন্ন বক্তব্যে বলা হয়, বাইতুল মাকদিসকে ইসরাইলের রাজধানীরূপে স্বীকৃতি ঘোষণা করার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছেন। এ মরণখেলা থেকে তাকে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর ও ঢাকামহানগর সভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করে বলেন, আগামী ১৩ই ডিসেম্বর বুধবার বেলা এগারটায় মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করা হবে। ঘেরাওকর্মসূচীতে দলে দলে যোগদান করার জন্য সবার প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।

***

ঘোষণা অনুযায়ী ১৩ই ডিসেম্বর বুধবার নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বাইতুল মুকাররমের উত্তর গেইট লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। নির্ধারিত সময়ে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে হেফাজতনেতারা বলেন, ইসলামের প্রথম কেবলা পবিত্র মসজিদুলআকছা ও বাইতুল মাকদিসকে ইহুদিদের সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের রাজধানী বলে স্বীকৃতি ঘোষণা করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মুসলিমবিশ্বের হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন। মুসলমানদের কাছে তাদের ঈমানের দাবী হলো, ইসরাইল ও আমেরিকার সঙ্গে সবধরনের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং ইহুদী-মার্কিন পণ্য বর্জন করা। বক্তারা বলেন, বুকের রক্ত দিয়ে হলেও মার্কিন-ইসরাইলী এ চক্রান্ত রুখে দিতে হবে। আল্লাহর সাহায্য হলে মুসলিমবিশ্বের জন্য তা অসম্ভব নয়।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, বাইতুল মাকদিস ফিলিস্তীনের ছিলো, ইনশাআল্লাহ ফিলিস্তীনের থাকবে। যালিম ট্রাম্পের অন্যায় ঘোষণা মুসলিবিশ্ব মেনে নেবে না। এ ঘোষণা বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

ঘেরাওপূর্ব সমাবেশ শেষে শুরু হয়ে যায় দীর্ঘ বিক্ষোভ মিছিল। সাধারণ মুসলিম জনতার অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিলটি দেখতে দেখতে গণমিছিলের রূপ ধারণ করে।

পল্টন মোড় ও বিজয়নগর-কাকরাইল হয়ে মিছিলটি শান্তিনগর পৌঁছলে পুলিশ কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে মিছিলের গতিরোধ করে। ফলে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য ও মুনাজাতের মাধ্যমে মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। পরে সেখান থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় মাওলানা কাসেমীর নেতৃত্বে ছয়সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বারিধারার মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে স্মারকলিপি দেন। দূতাবাসের কর্মকর্তা উইলিয়াম নূন স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। হেফাজতের প্রতিনিধিদলে ছিলেন মাওলানা মাহফূযুল হক, ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আযীযুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মুজীবুর-রহমান হামীদী ও মাওলানা ফযলুল কারীম কাসেমী।

মাওলানা মাহফূযুল হক বলেন, মুসলমানদের প্রথম কেবলা বাইতুল মাকদিসকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করে ট্রাম্প ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন।

মুসলিমজাহানের কর্তব্য হবে ট্রাম্পকে আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারের ব্যবস্থা করা। ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, আজ মুসলিম উম্মাহর ঈমানী পরীক্ষা চলছে। এ পরীক্ষায় আমাদের উত্তীর্ণ হতে হবে। আমাদের আজ আত্মসমালোচনা করে নিজেদের ভুলবিচ্যুতির সংশোধন করতে হবে। সর্বশক্তি নিয়ে আমাদের দাঁড়াতে হবে বাতিলের মোকাবেলায়।

মাওলানা আযীযুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ফিলিস্তীনে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছে। তাদের সঙ্গে আজ একাত্মতা ঘোষণা করতে হবে। আল্লাহ যেন তাদের জানমাল, ইজ্জত-আবরুর হিফাজত করেন সে দু‘আ করতে হবে।

মাওলানা মুজীবুর-রহমান হামীদী বলেন, ট্রাম্পের ঘোষণা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। আজ আমাদের কতর্ব্য হবে ক্ষোভ ও ক্ষতকে জিহাদের শক্তিতে পরিণত করা এবং যে কোনমূল্যে এ অন্যায় ঘোষণা প্রতিহত করা।

হিফাজতে ইসলামের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য ইসলামী দলও নিজ নিজ অবস্থান থেকে কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে।

ইসলামী আন্দোলনের ঘোষণা ছিলো ১১ই ডিসেম্বর মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করার। ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বাইতুল মুকাররাম উত্তর গেইটে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে দুপুর একটার দিকে চরমোনাই পীর সাহেবের নেতৃত্বে মার্কিন দূতাবাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। মিছিলটি পুরানা পল্টন মোড় ও কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর পৌঁছার পর পুলিশিবাধার মুখে পড়ে। ফলে সেখানেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মসূচী সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ রেযাউল করীম বলেন, ট্রাম্পকে তার ঘোষণা বাতিল করতে হবে, অন্যথায় মুসলিমবিশ্ব ঐক্যবদ্ধভাবে এ অন্যায়ের মোকাবেলা করবে।

হেফাজতের নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে

আমীরে হেফাজতের পায়গাম

হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফী-এর পক্ষ হতে হেফাজতের মহাসচীব আল্লামা জোনায়েদ বাবুনগরী এক বার্তায় বলেনÑ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানীরূপে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মুসলিমবিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তার এই সিদ্ধান্ত প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য এবং ঈমানের দাবী।

হেফাজতে ইসলাম কোন রাজনৈতিক দল নয়। কিন্তু আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই; বাইতুল মাকদিস হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর ঈমান ও আকীদার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়। এর  সঙ্গে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং হেফাজতে ইসলামের প্রত্যেক নেতা-কর্মীর প্রতি আমার আদেশ, নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাইতুল মাকদিসের বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার জিহাদে শামিল হোন। সাধারণ মুসলমানদেরও সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করুন।

বাইতুল মাকদিস ও মসজিদুল আকছায় যে সকল প্রতিবাদ-কারী ও বিক্ষোভকারী ইহুদী সেনাদের বর্বতার মুখে শহীদ হয়েছে তাদের মাগফেরাতের জন্য, এবং আলআকছার মুক্তির জন্য দু‘আ করুন। 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা