আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

আল কুদসসংখ্যা (বিশেষ)

আমরা মর্মাহত হে ‘ধর্মগুরু’! বললেন! বললেন না! বললেন! কেন, পোপ মোহদয়!?

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

ক্যাথলিক খৃস্টজগতের ধর্মগুরু পোপ ফ্রানসিস। তার ধর্ম ও বিশ্বাস সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না, কিছুই না। আমি বলতে চাই আমার ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আমার কোরআনের বাণীÑ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য, মনোনিত ও অনুমোদিত একমাত্র দ্বীন ও ধর্ম হচ্ছে ইসলাম, ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু নয়।

আমি বলতে চাই, এই উম্মাহর প্রতি কোরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে-

ধর্মে প্রবেশের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের কোন সুযোগ নেই।

আমি এখানে ইতিহাসের পাতা মেলতে যাবো না! আমি এখানে বলতে যাবো না অন্যধর্মের প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহ্র অতীতের গৌরবময় ইতিহাসের কথা। এমনকি আমি এখানে বলতে যাবো না,

ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি অন্য ধর্মের ধর্মান্ধদের হিং¯্রতা ও নৃশংসতার কলঙ্কময় ইতিহাসের কথা। আর বর্তমান! সে তো সারা বিশ্বের চোখের সামনে! অন্তত যাদের চোখ খোলা এবং বিবেক জাগ্রত, তাদের সামনে।

আমি এখানে এমন কোন কথা বলবো না, এমনি আকারে ইঙ্গিতেও না, যা শতকোটি মানুষের ধর্মগুরুকে কিছুমাত্র বিব্রত করবে! কিংবা তার ধর্মীয় মর্যাদাকে বিন্দুমাত্র আহত করবে। আমি বরং কামনা করবো, তিনি তার ধর্মীয় মর্যাদায় স্বমহিমায় সমাসীন থাকুন।

আমি শুধু অনুমতি চাইবো ‘মহামান্য’ পোপের কাছে একটি সত্যের মৃদু উচ্চারণের! খুবই মৃদু, যা শুধু তার কান পর্যন্ত পৌঁছবে, অন্য কারো কানে নয়। আমি শুধু অনুমতি চাইবো এই কথাটি বলার জন্য, ‘আপনি হে মহামান্য পোপ, মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ঠিকমত বুঝতে পারেননি!

আমি না হলেও আমার উম্মাহর সরল সহজ বহু মানুষ আপনার পোশাকের শুভ্রতা দেখে আশা করেছিলো, অন্তত আরাকানের মুসলিম জনপদে বইতে থাকা খুন এবং জ্বলতে থাকা আগুন থেকে বুঝতে পারবেন, সমগ্র উম্মাহর চোখ থেকে এখন কত অশ্রু ঝরছে! তাদের হৃদয়ে এখন কী পরিমাণ রক্ত ঝরছে! তারা আশা করেছিলো, আপনি বুঝতে পারবেন, ‘চোখগুলো রোহিঙ্গাদের হলেও এ চোখের পানি বিশ্বের সকল মুসলমানের।’

কত ভালো হতো যদি আপনি আরাকানের মুসলিম জনপদের খুন-আগুনের তুফান থেকে এ উপলব্ধিটুকু আহরণ করে ‘ওখানে’ যেতেন এবং এখানে আসতেন যে, এটা তো মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধ। কত ভালো হতো যদি আপনি মুসলিম উম্মাহর চোখের পানি এবং হৃদয়ের রক্তক্ষরণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলতেন, বলতে পারতেন, ‘থামাও এ গণহত্যা! বন্ধ করো মানবতার বিরুদ্ধে এ জঘন্য অপরাধ!’

কত ভালো হতো হে মহামান্য পোপ! হয়ত বন্ধ হতো না জনপদের রক্তপাত এবং আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। হয়ত নিভতো না জনপদের এবং আমাদের বুকের আগুন, কিন্তু ..

এইটুকু সান্ত¦না থাকতো, শতকোটি মানুষের মহামান্য ধর্মগুরু আমাদের ‘কষ্ট’ বুঝতে পেরেছেন! আমাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়েছেন! অন্তত যদি বুঝতে পারতাম, ‘আমাদের চোখের অশ্রু এবং বুকের রক্তকে আপনি তরল পানি মনে করেননি!

আমার খুব ভয় করে হে মহামান্য পোপ! আমি আন্তরিকভাবে চাই, আমার কোন বক্তব্য, এমনকি আমার কোন শব্দ যেন আপনাকে আহত না করে। এমন যদি হয়, আহত হৃদয়ের আর্তনাদ ভেবে ক্ষমা করা কি সম্ভব হে ধর্মগুরু!! ক্ষমাই নাকি আপনার ধর্মের প্রধান বাণী!!

আপনি ভ্যাটিকান থেকে বললেন ‘আমার রোহিঙ্গা ভাই!’ মিয়ানমারে এসে ভুলে গেলেন অশ্রুভেজা, আগুনে পোড়া এবং রক্তমাখা শব্দটি! কেন হে মহামান্য ধর্মগুরু?!

যাদের হাতে রক্ত লেগে আছে মুসলিম জনগোষ্ঠীর, তাদের সঙ্গে আপনার ওঠা হলো, বসা হলো, করমর্দন হলো, এমনকি ...

সূ চী, আপনাদের শন্তির পদক পাওয়া গণতন্ত্রের নেত্রী,

তার কথা না হয় থাক। আপনার সাক্ষাৎলাভে ধন্য হলো এমনকি একজন খুনী জেনারেল! (কারো কারো মতে অবশ্য ধন্যতার স্থানবদল হয়েছে!)

এত কিছুর সময় হলো আপনার, সময় হলো না শুধু আরাকানের রক্তাক্ত জনপদে একটু ‘বেড়িয়ে আসার!’ কেন হে মহামান্য ধর্মগুরু!?

ওখান থেকে এখানে এলেন! আমরা আপনাকে পরম সম্মানিত মেহমানরূপে স্বাগত জানালাম। ধন্যবাদ মহামান্য ধর্মগুরু! ভুলে যাওয়া শব্দটি আপনার মনে পড়ে গেলো।

 

বহু মানুষ গদ গদ হলো, শুধু এই জন্য যে, রোহিঙ্গা শব্দটি আপনার মুখে ‘ওখানে’ না হলেও ‘এখানে’ উচ্চারিত হয়েছে! আমাদের সরল নির্বুদ্ধিতায় আপনার হাসি পায়নি তো!! আপনার অবশ্য দোষ হবে না। হাসবার মত নির্বুদ্ধিতাই তো!!

আবারও যথাযোগ্য বিনয়ের সঙ্গে একটি প্রশ্ন নিবেদন করতে চাই, ‘আপনি রিকশায় চড়লেন! খোলা জীপে আরোহণ করলেন! এখানে ওখানে বেড়ালেন! আপনার ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান করলেন। একটু সময় করে বিমানে চড়ে দেখে আসতে পারলেন না, ওখানে নাফনদীর পানি এখন কত লাল!! পলিথিনের ছাউনীতে জীবন কত নির্মম! কত মর্মন্তুদ!! কেন পারলেন না, হে মহামান্য ধর্মগুরু!!  ওখান থেকে লোক আনালেন! কেউ যদি বলে, আপনি লোক হাসালেন!!

আমি বলবো না, আমি বিশ্বাস করতে চাই, আপনার কোন সীমাবদ্ধতা ছিলো। কিন্তু ঐ অসহায় মানুষ গুলোকে টানা হেঁচড়া না করলে কি হতো না!!

আপনার এখানকার লোকেরা যে ‘অজুহাত’ খাড়া করেছে, আশা করি, আপনি অতটা হৃদয়হীনতার পরিচয় দেবেন না।

আশা করি, আপনি গ্রহণযোগ্য কোন কারণ বলবেন, কেন

এমন নাযুক সময়ে নির্দিষ্টভাবে এই দুটি দেশ সফরের ইচ্ছে হলো আপনার? ইচ্ছে যদি হলোই, সময়ের এত অভাব হলো কেন আপনার? ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি তো তবু এসেছেন।

আমাদের খাদেমুল হারামাইন তো ...

এই সময় তিনি রাশিয়া গেলেন! হাজার কোটি টাকার অস্ত্র খরিদ করলেন!

জানি না কাকে মারার জন্য, কিংবা কাকে ভয় দেখাবার জন্য!! মিয়ানমার তো ভয় পেলো না! তার বয়ানেরও ‘কুছ পরোয়া’ করলো না।

আপনি তো  তবু দয়া করে এসেছেন, আপনজনের তো এই অবসরটুকুও হলো না। আসলে সময়টা এখন আমাদের মন্দ যাচ্ছে। সুসময়ের অপেক্ষায় ধৈর্যধারণ ছাড়া উপায় কী!!

মহামান্য পোপ ফ্রান্সিস, আপনার মনে আছে,

বহু আগের ভ্যটিকান পোপ দ্বিতীয় আরবানের কথা?! যিনি খৃস্টধর্মের নেতৃত্বে ছিলেন দীর্ঘ এগারো বছর (১০৮৮ Ñ১০৯৯)

তিনিই ছিলেন মুসলিমবিশ্বের বিরুদ্ধে ক্রুশেডর রূপকার।

মহামান্য পোপ, আজ যুগের এই সঙ্কটসন্ধিক্ষণে পোপ দ্বিতীয় আরবানের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে

আপনার অবস্থান আমরা অবশ্যই জানতে চাইবো!

 

জেরুসালেম সম্পর্কে

মহামান্য পোপ

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেরুসালেম সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন সে বিষয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ক্যাথলিক বিশ্বের মহামান্য ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস! তিনি বলেছেন, ‘আমি আশা করবো, জেরুসালেমের স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হবে।

ক্যাথলিক বিশ্বে তিনি সত্যি যদি ‘মহামান্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন তাহলে তার বক্তব্য আরো জোরালো, আরো শাণিত হওয়া দরকার ছিলো বলে আমরা মনে করি। এতটা জোরালো ও শাণিত যাতে সমগ্র খৃস্টজগতে আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিচলিত হয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হন। কিন্তু এমন ‘নিরামিষ’ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন যাতে যুক্তরাষ্ট্র এবং সন্ত্রাসবাদী নেতানিয়াহু অন্যরকম বার্তা পাবেন বলে আমাদের আশঙ্কা....!

 

পোপ যদি এটা না বলতেন ভালো

হতো।

 

ক্যাথলিক খৃস্টানজগতের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি মিয়ানমার অবস্থানকালে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন কি করেননি তা নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নেই। কারণ এর দ্বারা না আগুন নিভবে, না রক্ত ঝরা বন্ধ হবে। বরং আমরা মনে করি, পোপ মিয়ানমারের জান্তাকে নৈতিক সমর্থন যুগিয়ে এসেছেন।

ঢাকা থেকে ফেরার পথে বিমানে বসে তিনি ব্যখ্যা দিয়েছেন মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করার। ব্যাখ্যটা কী? ‘জান্তা তাতে অসন্তুষ্ট হতে পারে। তাহলে তো আমার বক্তব্য তার কাছে তুলে ধরার সুযোগই পাবো না।’ যদ্দুর মনে পড়ে পোপের কাপড়ের রং সাদা। এমন বক্তব্যের মাধ্যমে আসলে তিনি সাদা কাপড়ে কালো দাগ ফেলেছেন। যত চেষ্টাই করুন, এ দাগ কখনো মোছবে না। গণহত্যার অপরাধীকে এতটা সমঝে চলতে হলো পোপকে! তারপর কী কথাটা তিনি তাকে শুনাতে পেরেছেন শুনি!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট