আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

শেষের পাতা

শেষের পাতা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

এমন যেন হয় আমাদের আমল

মহান সুলতান গাজী ছালাহুদ্দীনের যামানায় আক্কা শহর অবরোধ করলো ছালীবীরা। সুলতান চাচ্ছিলেন দুশমনের অবস্থানক্ষেত্রে আগুন ধরিয়ে দিতে, কিন্তু সম্ভব হচ্ছিলো না। বড় বড় সমরবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া হলো, কাজ হলো না। তখন এক সাধারণ যুবক নিবেদন করলো, আমি ইনশাআল্লাহ পারবো। সুলতান সস্নেহে বললেন, আচ্ছা, চেষ্টা করে দেখো! যুবক পেট্টোলের সঙ্গে কিছু রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে দুশমনের অবস্থানে নিক্ষেপ করলো। তাতে নিক্ষিপ্ত আগুন দীর্ঘস্থায়ী হলো এবং কাজ হলো। পেট্রোল আগেও ব্যবহার করা হচ্ছিলো, কিন্তু কোন মিশ্রণ ছাড়া, ফলে দপ করে জ্বলেই নিভে যেতো। তাই কাজ হতো না। সুলতান ছালাহুদ্দীন খুশী হয়ে বললেন, যুবককে আমার কাছে আনো। সে আজ আক্কা শহর বাঁচিয়েছে। তাকে পুরস্কৃত করবো, কিন্তু যুবক বললো, আমি তো আল্লাহর জন্য করেছি! পুরস্কার কিসের!

 

একটি দুআ

  হে আল্লাহ! তোমার নবী বলেছেন, যখন চাইবে তখন শুধু আল্লাহর কাছে চাও। আমরা ভুল করেছি, ভুল করে আমরা মানুষের কাছে চেয়েছি। ভুল করে আমরা মাখলূকের সামনে হাত পেতেছি। ফল হয়েছে শুধু বঞ্চনা; বঞ্চনা ছাড়া আর কিছু না। ফল হয়েছে শুধু লাঞ্ছনা; লাঞ্ছনা ছাড়া আর কিছু না। তোমার নবী বলেছেন, যখন সাহায্য চাইবে তখন শুধু আল্লাহরই কাছে সাহায্য চাও। আমরা ভুল করেছি, ভুল করে আমরা মানুষের কাছে, মাখলূকের কাছে সাহায্য চেয়েছি, আর অপদস্থ হয়েছি। হে আল্লাহ তুমি আমাদের মাফ করো, তুমি আমাদের সাহায্য করো। সবকিছু হারিয়ে এখন আমরা বুঝতে পেরেছি, তুমি ছাড়া আমাদের কেউ নেই!

 

সেই চেতনার জন্য

  শৈশবে পড়েছি গল্পে। বড় হয়ে পড়েছি কিতাবে। শৈশবে মনে হয়েছে, কত ভালো মানুষ! আমাকেও হতে হবে এমন! বড় হয়ে ভেবেছি, হাঁ, ভালো মানুষ! তবে ইতিহাসের ঘটনায় এবং বইয়ের পাতায় যা সম্ভব, বর্তমানের বাস্তবতায়, জীবনের পাতায় কি তা সম্ভব?!

ঘটনা হলো সে যুগের সোনার মদীনার। একটি বকরির মাথা হাদিয়া হয়ে সাতঘর ঘুরে, ফিরে এলো প্রথম ঘরে। প্রতিটি ঘরের মানুষ হাদিয়া পেয়ে আবার হাদিয়া দিলেন পড়শীর ঘরে!!

আরেকটি ঘটনা যুদ্ধের মাঠে। আহত ব্যক্তির ঠোঁটের সামনে পানির পাত্র ধরা হলো। এমন সময় একটু দূরে আরেকজন আহত মুজাহিদ ক্ষীণ কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘পানি!’ আগের জন বললেন, তার কাছে নিয়ে যাও। এভাবে কয়েকজন হলো। শেষে প্রথমজনের কাছে এসে দেখা গেলো, তিনি চলে গেছেন ‘শারাবান তাহূরার দেশে!’ একে একে সবার কাছে গিয়ে দেখা গেলো একই দৃশ্য!! হয়ত এখন হুবহু এমন হবে না আমাদের ঊষর জীবনে, কিন্তু সামান্য কিছুও কি হতে পারে না, একপশলা বৃষ্টির মত!! তাহলে কিন্তু আলকুদস...

 

নফসের সংশোধন

দু’টি গুণ যদি জীবনে অর্জন করা যায়। ধীরে ধীরে পরিপূর্ণরূপে যদি জীবনের আচরণে এবং উচ্চারণে গুণদু’টি ধারণ করা যায়, আল্লাহর রহমতে নফসের পরিপূর্ণ সংশোধন হয়ে যায়। মানুষ তখন ‘ইহসান’-এর মর্যাদায় উন্নীত হয়ে যায়। জান্নাতের পথে সে বহু দূর এগিয়ে যায়, বরং জান্নাতের দুয়ারে পৌঁছে যায়।

মাত্র দু’টি গুণ। আল্লাহ নিজে বলেছেন বান্দাকে তাঁর পাক কালামে গুণদু’টির কথা। ক্রোধ সম্বরণ করা। ক্রোধকে আমি অস্বীকার করতে পারবো না। ক্রোধ তো স্বয়ং আল্লাহ রেখেছেন আমার স্বভাবের মধ্যে; আমার কর্তব্য হলো ক্রোধকে সম্বরণ করা। চরম ক্রোধের সময়ও নিজেকে সংযমের মধ্যে রাখা। বারবার যদি চেষ্টা করি, দেখা যাবে, আমার সংযম, আমার সম্বরণশক্তি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানুষকে ক্ষমা করা। মানুষের সঙ্গে ক্ষমা  -সুন্দর আচরণ করা। যে তোমাকে কষ্ট দেয়, তোমার হক নষ্ট করে তাকে তুমি মাফ করে দাও। মানুষ যদি চেষ্টা শুরু করে, ধীরে ধীরে ক্ষমার গুণে সে অনেক উঁচুতে উঠতে পারে। আজ থেকে, এখন থেকে আমরা শুরু তো করতে পারি!!

 

শেষ কথা

যে কথাটা আমাদের বলা দরকার ছিলো জীবনের শুরুতে সে কথাটা আমরা বলেছি জীবনের শেষে! মাঝখান থেকে পার হয়ে গেছে জীবনের অনেক মূল্যবান সময়; পার হয়ে গেছে অনেক যুগ। যদি বলি, আমাদের যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে তাহলে বলবো, এটুকু শিক্ষা অর্জনের জন্য আমাদের দিতে হয়েছে অনেক বেশী মূল্য!

তারপরো তো আশঙ্কা হয়, সঠিক শিক্ষা আমরা অর্জন করেছি কি না! যাকে বলে প্রকৃত মোহভঙ্গ, যাকে বলে সঠিক উপলব্ধি সেটা আমাদের হয়েছে কি না!

যদি সত্যিকারের উপলব্ধি হয়ে থাকে তাহলে বিরাট মূল্য দিয়ে অর্জিত হলেও এ শিক্ষাকে আমরা আগামী জীবনের চলার পথের পাথেয়রূপে স্বাগত জানাই।

এমন তো নয় যে, কেউ আমাদের সতর্ক করেনি! এমন তো নয় যে, কেউ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়নি। যাদের দৃষ্টি ছিলো স্বচ্ছ, চিন্তা ছিলো পরিচ্ছন্ন, যাদের হৃদয় ও আত্মা ছিলো জাগ্রত তারা তো সতর্ক করেছেন, ‘হে পাথিক, তোমার গন্তব্য হিজাযে, তুমি কেন ধরেছো তুর্কিস্তানের পথ?!’ তারা তো বারবার স্মরণ করিয়েছেন কোরআানের সতর্কবাণী, ‘তাদের তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু, তোমাদের বন্ধু নয়!’

তারা তো স্মরণ করিয়েছেন আলাকোরআনের সুস্পষ্ট আদেশ, ‘আর তোমরা তাদের জন্য শক্তি অর্জন  করো, যত দূর পারো ... যাতে তাদের ভয় দেখাতে পারো।’

আমরা শক্তি অর্জনের ন্যূনতম চেষ্টাও করিনি। কেন? তারই তো মাশুল দিতে হলো এখন...

শেষ পর্যন্ত বলতেই হলো, ‘আমেরিকা, তুমি সরে যাও, তুমি নিরপেক্ষ নও এবং নও আমার পক্ষে, তুমি তো ইহুদির পক্ষে। যাও, সরে যাও তুমি! প্রয়োজন নেই তোমার মধ্যস্থতার!

আবারও বলছি, আমার বড় ভয়, এ উপলব্ধি কত দিনের এবং কতটা গভীরের!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা