শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

আল কুদসসংখ্যা (৩/২) | কচি ও কাঁচা

আমার রোজনামচা

মানচিত্রের দরস আমার ভালো লাগে। আজ আরো ভালো লাগলো। আপা বললেন, কাল তোমাদের মানচিত্র  আঁকার প্রতিযোগিতা। তারপর আপা জিজ্ঞাসা করলেন, মানচিত্র বলতে তোমরা কী বুঝো?

তিনটি মেয়ে দাঁড়িয়ে উত্তর দিলো। একটি মেয়ে বললো, মানচিত্র হলো ঐ সব আঁকা চিত্র যার দ্বারা বোঝা যায়, কোন্ দেশটি কোথায় আছে।

আরেকটি মেয়ে আরেকটু ভালো করে বললো, মানচিত্র মানে কাগজে আঁকা নকশা, যার সাহায্যে বিভিন্ন অঞ্চল, দেশ-মহাদেশের অবস্থান জানা যায় এবং জানা যায়, কোন্ দেশের আয়তন কত এবং কোন্ দেশটি কোথায় আছে।

আপা বললেন, তুমি ভালোই বলেছো। তবে ‘কাগজে আঁকা নকশা’ বললে কেন? কাগজ ছাড়া অন্য কিছুতেও তো আঁকা হতে পারে!

আরেকটি মেয়ে আপার টেবিলের সামনে রাখা মানচিত্রটি দেখিয়ে বললো, এই যে এটা হচ্ছে মানচিত্র।

সবাই হেসে উঠলো। আপা মৃদু তিরস্কার করে বললেন, কারো কথায় এভাবে হাসতে নেই। এটা কিন্তু ভালো না। তাছাড়া ছোট্ট রহিমা ভালোই তো বলেছে। কথা না বলে জিনিসটা দেখিয়ে দিয়েছে। তাতে তো চিনতে আরো সুবিধা হলো!

আপা আমাকে আলাদা করে বললেন, মাসূমা, তুমি কিছু বলছো না যে?!

আমি লজ্জা পেয়ে দাঁড়ালাম। আমার সবসময় দাঁড়িয়ে কিছূ বলতে লজ্জা করে। আমি বললাম, আপা, মান অর্থ পরিমাপ, বিচার; চিত্র মানে নকশা। যে নকশা দ্বারা কোন দেশ ও অঞ্চলের মান বা বিভিন্ন রকমের মাপ ও অবস্থা জানা যায় তাকে বলে মানচিত্র।

আরেকটা কথা আপা, মানচিত্র শুধু দেশ-মহাদেশেরই হয় না। রাস্তার মানচিত্রও হতে পারে। কোন্ পথ কোন্ দিক দিয়ে কোথায় গিয়েছে, কোন্ পথের দৈর্ঘ্য কত, যে নকশা দ্বারা এগুলো জানা যায় সেটা হলো পথের মানচিত্র।

***

আজ দরসের কামরাটিকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আমরাই সাজিয়েছি। আপা শুধু দেখিয়ে দিয়েছেন। দেয়ালে বড় বড় মানচিত্র টানানো হয়েছে। আর একটা বড় টেবিলের উপর রাখা হয়েছে গ্লোব।

আপা প্রথমে বললেন, মানচিত্র- বিদ্যা অনেক প্রাচীন বিদ্যা। মানচিত্রবিদ্যায় মুসলিম বিজ্ঞানী- দের অনেক অবদান রয়েছে। বড় হয়ে তোমরা এ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।

***

আপা বললেন, কিছু দিন আগে তোমাদের আমি আরবদেশের মানচিত্র পড়িয়েছি। তোমরা এখন জানো, কোন্ আরবদেশটি কোথায়? আচ্ছা বলো তো, আরবের মানচিত্রে ফিলিস্তীনের অবস্থান কোথায়?

একটি মেয়ে উঠে গিয়ে দেয়ালে টানানো নকশার ঠিক জায়টি দেখিয়ে বললো, এই যে, এটা হচ্ছে ফিলিস্তীন!

আপা এবার সবচে’ বড় মেয়েটিকে বললেন, সুলতানা, তুমি গ্লোবের মধ্যে দেখাও তো কোথায় ফিলিস্তীনের অবস্থান? মেয়েটি ঠিকমত দেখাতে পারলো। আপা তাকে শাবাশ দিলেন। এরপর আপা ফিলিস্তীনের বিভিন্ন অঞ্চল মানচিত্রে দেখালেন। ইসরাইলের অবস্থানও দেখালেন। ফিলিস্তীন এবং ইসরাইল সম্পর্কে আপা অনেক আলোচনা করলেন।

আপা বললেন, ইসরাইলের পুরো ভূখ-টাই হচ্ছে ফিলিস্তীনের ভূখ-। ইহুদিরা জোর করে দখল করে নিয়েছে। এখানে ফিলিস্তীনী আরবদের বসতি ছিলো। ইহুদিরা তো আরবের বাসিন্দা নয়। তারা ছিলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বাসিন্দা। তাদেরকে সেখান থেকে ফিলিস্তীনে আনা হয়েছে। ফিলিস্তীনের আসল বাসিন্দা যারা, আরব; তাদেরকে তাড়িয়ে ইহুদিদেরকে অন্যায়-ভাবে সেখানে বসানো হয়েছে। এভাবে ফিলিস্তীনের ভূমিতে সৃষ্টি করা হয়েছে ইহুদিদের অবৈধ রাষ্ট্্র ইসরাইল। ...

আপা খুব সুন্দর করে বলতে পারেন। শুনতে ভালো লাগে। মনে হয় সবকিছু চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে। অনেক মেয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। প্রত্যেকের সঙ্গে রাবার, তুলি ও জ্যামিতিবক্স ছিলো। চল্লিশ মিনিটি সময় দেয়া হলো। সব মেয়ে একমনে আঁকছে। আপা ঘুরে ঘুরে সবার অঙ্কন দেখছেন। কাউকে কিছু বলছেন না।

চল্লিশ মিনিট শেষ হলো। সবার খাতা জমা নেয়া হলো। একঘণ্টার মধ্যে ফল ঘোষণা করা হলো। সবচে’ ছোট যে মেয়েটি সে হলো প্রথম, নাম ফাতেমা। আপা তাকে পুরস্কার দিলেন একটি বই। নাম হলো, ‘আমি ফিলিস্তীন’।

বইটি  আমি পড়েছি। ফিলিস্তীন যেন একটি বন্দী মেয়ে। সে নিজের বন্দী জীবনের কষ্টের কথা বলছে, আর ফরিয়াদ করে বলছে, শত্রুর কবল থেকে তাকে উদ্ধার করার কি কেউ নেই?!

ফিলিস্তীন নামের বন্দী মেয়েটি অচীন দেশের এক শাহযাদী। ভয়ঙ্কর এক রাক্ষস বা দৈত্য তাকে বন্দী করে রেখেছে। আর শাহযাদী পথ চেয়ে আছে, কবে আসবে দূর দেশের শাহযাদা। এসে রাক্ষসের হাত থেকে, দৈত্যের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।

বইটা গল্পের মত করে লেখা হয়েছে। পড়তে খুব ভালো লাগে। একটি বন্দী মেয়ের মুখের করুণ ছবি মনের পর্দায় ভেসে ওঠে।

আপার হাত থেকে পুরস্কার পেয়ে ফাতেমা খুশী হলো কি না বোঝা গেলো না। কারণ সে চুপচাপ দঁড়িয়ে আছে। মুখে হাসি নেই।

আপা ফাতেমাকে বললেন, পুরস্কার পেয়ে তোমার কেমন লাগছে বলো তো?

ফাতেমার চোখ দু’টো তখন ছল ছল করছে। আমরা তো অবাক! আপা তাকে আদর করে বললেন, তুমি খুশী হওনি?

ফাতেমা জানালো, সে খুশী হয়নি। কারণ ফিলিস্তীন কত সুন্দর একটি দেশ! যেন এক শাহযাদী। ফিলিস্তীন যে রাক্ষসের হাতে বন্দী। ফিলিস্তীন যেদিন রাক্ষসের হাত থেকে মুক্ত হবে সেদিন সে খুশী হবে।

ফাতেমা আরো বললো, আমি প্রতিদিন দুআ করবো, ফিলিস্তীনের স্বপ্নের শাহযাদা যেন তাড়াতাড়ি আসে। এসে শাহযাদী ফিলিস্তীনকে রাক্ষসের হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। *