আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

সম্পাদকের রোযনামচা

সম্পাদকের রোজনামাচা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

২৮-৩-৩৯ হি.

আল্লাহর শোকর কোন্ ভাষায় আদায় করবো?! পুষ্পের দ্বিতীয় সংখ্যার কাজ প্রায় অর্ধেক গুছিয়ে এনেছি। লিখছি, সম্পাদনা করছি, উদ্যমে উদ্দীপনায় তারুণ্যের জোয়ার অনুভব করছি। হঠাৎ কী হলো! চিন্তার আকাশে একটা তারা যেন ঝিলমিল করে উঠলো! আমার সেই প্রিয় শব্দটি আবার বলি, গায়ব থেকে ইশারা এলো, ‘আগামী সংখ্যা কি হতে পারে না আলকুদস্-সংখ্যা!’ তাতে কিছু ঈমান হয়ত উদ্দীপ্ত হবে!! কিছু প্রাণ হয়ত নতুন তরঙ্গ লাভ করবে!!

কী যে, হলো! বুড়ো হাড়গুলোতে যেন নতুন বিজলীর চমক সৃষ্টি হলো। কত যে কামনা করি, এরকম বিজলী-ঝলক আরো ঔজ্জ্বল্য নিয়ে যেন দেখা দেয় আমার তরুণ ছাত্রদের দেহে মনে!! তারুণ্যের সত্যিকারের দ্যুতি যেন তাদের অস্তিত্ব থেকে বিচ্ছুরিত হয়, হতে থাকে! কিন্তু ...!! তবু কামনা করি, তাদের তারুণ্য আমাদের বার্ধক্যকে যেন অনেক দূর ছাড়িয়ে যায়!!

২৯-৩- ৩৯ হি.

পিছনের লেখাগুলো পরবর্তী সংখ্যার জন্য সঞ্চিত রেখে আল্লাহ ভরসা বলে শুরু করলাম আলকুদসসংখ্যা। ‘প্রথমকথা’ লিখতে গিয়ে কিছু ভাবলাম না, শুধু বললাম, আমার কলমে তুমি ‘শিউলীফুল দাও’, কাগজে মালা গাঁথবো।

কিচ্ছু ভাবিনি, কিচ্ছু করিনি, শুধু একটা আচ্ছন্নতা নিয়ে আকাশের প্রতি আত্মসমাহিত হলাম! জাগ্রত হয়ে দেখি, প্রথম কথা ও সম্পাদকীয় তৈয়ার! কীভাবে হলো, বিশ্বাস করো, আমি জানি না! শুধু বলতে পারি, আকাশের করুণা!

এগুলো তো বলার কথা নয়! কেন বললাম! কেন পর্দা তুলে দিলাম!! শুধু এ আশায় যে, হয়ত তোমরা যারা কলমের নতুন মুসাফির, দীর্ঘ সফরের শুরুতে বুঝে নিতে পারবে পথের মানচিত্র!

১-৪-৩৯ হি.

সম্পাদকের রোযনামচা  পুরোটাই প্রস্তুত ছিলো। কিসমতে থাকলে আগামী সংখ্যায় কাজে লাগবে! ‘রসের কলমদানি’ দেখে লজ্জাই হলো, এখন কেন এমন লেখার ইচ্ছে হলো! আল্লাহ, তুমি মাফ করো।

***

ছেলেটা এখন অনেক দূরের সফরে। থাকলে কিছু সাহায্য হতো! প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সে তাড়াতাড়ি যোগাড় করে দিতে পারে।

***

পুষ্পের নবীন, কিশোর পাঠকেরা কোথায়? ওরা কি কলম ধরা ভুলে গিয়েছে?! এখনো তেমন কোন লেখা তো হাতে এলো না!! অনেক দিনের ঘুম তো, জেগে উঠে, হাতমুখ ধুয়ে বসতে কিছু সময় লাগতেই পারে! আচ্ছা, আমি না হয় আরেকটু অপেক্ষা করি!

৩-৪- ৩৯ হি.

প্রথমে লিখেছিলাম ‘আমার গাছে শিউলীফুল দাও, আমি কাগজের বুকে মালা গাঁথবো।

আসলে শিউলীফুলের প্রতি দুর্বলতা থেকে শুধু ফুল-এর পরিবর্তে শিউফুল লিখেছি। তার পরেই যত বিপত্তি। গাছ, কাগজ এগুলো বাক্য সাজানোর প্রয়োজনে এসেছে। যখন দুর্বলতা সংযমের মধ্যে আনা সম্ভব হলো ( লিখতে চেয়েছিলাম, দুর্বলতাটা ঝেড়ে ফেলা সম্ভব হলো। কিন্তু মনে হলো শিউলীর দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলার বিষয় হতে পারে না।)

তখন সহজেই লেখা হলো, ‘আমাকে ফুল দাও, আমি মালা গাঁথবো!’ এরকমও হতে পারে, ‘আমার কলমের মুখে ফুল দাও, আমি কাগজের বুকে মালা গাঁথবো।’

কিংবা ‘হে আকাশ, আমার কলমের মুখ থেকে যেন ফুল ঝরে, কাগজের বুকে সেই ফুল দিয়ে আমি যেন মালা গাঁথতে পারি।

***

গত সংখ্যায় সবকিছু দৌড়ের উপর হয়েছে, বানান ভুলের তো শেষ নেই! সম্পাদনায়ও রয়ে গেছে যথেষ্ট দুর্বলতা। ছেলে অবশ্য বলে, ‘তুমি যেটাকে মনে কর দুর্বলতা ...! তাই যদি হয় তাহলে তো ভালোই; আল্লাহর শোকর! তবে কামনা করি, সাহিত্যের সর্বোচ্চ মান অর্জনের পথে আমরা যেন সচেষ্ট থাকি।

৫-৪- ৩৯ হি.

আজ একটা লেখা এসেছে, মাগুরা থেকে। লেখক আরাকান-সংখ্যা হাতে পাওয়ার আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশের চেষ্টা করেছেন। লেখাটা ভালোই ছিলো। বক্তব্যে অন্তরঙ্গতার ছাপ ছিলো। কিন্তু কিছুটা অতিশয়তার দুর্বলতা রয়েছে। ব্যক্তিগত পত্র হিসাবে হয়ত ঠিক আছে, কিন্তু ...। ভদ্রলোকের অনুভূতিকে আমি শ্রদ্ধা করি; করতেই হবে। অন্তরঙ্গতা যে এখন খুবই দুর্লভ!

৭-৪-৩৯ হি.

খুবই শান্তির, খুবই প্রশান্তির ঘটনা ঘটলো! ছোট্ট একটি মেয়ে, ওর ভাই পড়ে মাদরাসাতুল মাদীনায়।  বিরতি শেষে ফিরে এসেছে মাদরাসায়। ছেট্ট বোনটির পক্ষ হতে ছোট্ট একটি চিঠি নিয়ে এসেছে আমার জন্য। কাঁচা কাঁচা হরফগুলো মনকে ছুঁয়ে যায়! পড়ে তো অবাক! বলে কী, আরাকানসংখ্যা পেয়ে খুশী হয়েছি, এবার আলকুদ্স-সংখ্যা!

জিজ্ঞাসা করলাম তোমার বোন সংখ্যা অর্থ বোঝে? বললো, আগে বুঝতো সংখ্যা মানে এক দুই তিন চার। এখন বুঝিয়েছি, প্রতি মাসে যে পত্রিকা বের হয় সেটাই হচ্ছে সংখ্যা। ও জানতে চাইলো আরাকানসংখ্যা মানে কী? বুঝালাম, আরাকানে মুসলমানদের উপর যুলুম হচ্ছে তো! এই সংখ্যায় আরাকানের মুসলমানদের কষ্টের কথা লেখা হয়েছে তো, তাই এটা হলো আরাকানসংখ্যা। বোনটি তখন বললো, তাহলে আলকুদস-সংখ্যা হবে না ভাইয়া?!

সবশুনে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম, তোমার কি মনে হয় না, বোনের চেয়ে সংসারের সুবিধাগুলো তুমি বেশী ভোগ করছো এবং নেয়ামতের কদর কম করছো?!

৯-৩-৩৯ হি.

আল্লাহর রহমতে ষোড়শ পৃষ্ঠার ‘আমাকে’ ‘তোমাকে’ ‘তাকে’ ‘সবাইকে’ এ তিনটি লেখা এক বৈঠকেই পেয়ে গেলাম। লেখাও হয়ে গেলো। যখন আকাশ থেকে প্রবাহ আসে, এমনই হয়। তবে আকাশের করুণার প্রতীক্ষায় থাকতে হয়। (লজ্জার কথা, এমন বিষয়েও প্রথমে লিখেছিলাম ‘অপেক্ষায়’! ‘প্রতীক্ষায়’ শব্দটি যদি প্রথমেই এসে যেতো কলমের মুখে, ভাবতাম, লেখা কিছুটা শেখা হয়েছে।)

এখন অবশ্য ঐ লেখাগুলো পরবর্তী  সংখ্যার জন্য সঞ্চিত থাকবে। নতুন করে লিখতে হবে আলআকছাপ্রসঙ্গে, ইনশাআল্লাহ।

১১-৪-৩৯ হি.

আল্লাহ্র রহমতের কি কোন শেষ আছে! আল্লাহ্র সাহায্য হলে কী না হয়! আর আল্লাহ্ তো গোনাহগার বান্দাকেও সাহায্য করতে চান! বান্দা যখন হেঁটে অগ্রসর হয়, আল্লাহ্ তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হন, এটা তো ‘কুদ্সের কালাম’! তারপর আর কী বাকি থাকে!!

এখন কলমের যে প্রবাহ তাতে মনে হয়, মানুষ যে ‘দু’হাতে লিখে কূল না পাওয়া’র কথা বলে তা হতে পারে! হয়ত আমার জন্য তা আলআকছার বরকত!!

১২-৪-৩৯ হি.

এক ছোট্ট মণি চিঠি লিখেছে, আরাকানের মযলূমানের জন্য তার দিল নাকি কাঁদে। পুষ্পের কচি ও কাঁচার সব ক’টি লেখা সে পড়েছে! রোহিঙ্গা শিশুর রোযনামচা একবার নিজে পড়েছে, আবার আম্মু পড়ে শুনিয়েছেন। অনেক নাকি কেঁদেছে! জানতে চায়, নূরে জান্নাত এখন কোথায়? ওকে দেখতে, একটু আদর করতে খুব ইচ্ছে ওর!

এই একটি চিঠি আমার জন্য অনেক বড় সান্ত¦না! পুষ্পের জন্য কষ্টগুলো কিছুটা হলেও কাজে আসছে! অন্তত একটি নিষ্পাপ হৃদয়কে তো স্পর্শ করেছে!!

১৪-৪-৩৯ হি.

আল্লাহর যত শোকর আদায় করি,  কম হবে। গত সংখ্যার সম্পাদকীয়টি শুরু থেকে শেষ আল্লাহর বিশেষ দান ছাড়া আর কিছু নয়। যতক্ষণ লিখেছি, স্পষ্ট অনুভব করেছি হৃদয়ের ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ‘কাঁটার আঘাত’ সাধারণত রূপক অর্থেই হয়, আমার ক্ষেত্রে এর রূপকতা সামান্যই। প্রায় পুরোটাই বাস্তব। কাঁটার আঘাতে আসলেই ফুল ফোটে, যদি আঘাতকে শান্ত-সংযতভাবে গ্রহণ করা যায়। পুষ্পের তৃতীয় প্রকাশনার যাত্রা শুরু এবং আরাকানসংখ্যা পুরোটাই হচ্ছে ‘কাঁটার আঘাতে ফোটা ফুল’!

বর্তমান সংখ্যার সম্পাদকীয় লিখবো, দেখি নিজের অজান্তেই লিখেছি ‘বরকত’! হয়ত ‘বাারকনাা হাউলাহূ’- চিন্তা করছিলাম। সান্ত¦না হলো, আশা করি আল্লাহ বরকত দান করবেন।

১৭-৪-৩৯ হি.

একজন মমতাময়ী মা লিখেছেন, যথেষ্ট ভুল বানানে লিখেছেন, তবে বিগলিত হৃদয়ের ফোঁটা ফোঁটা ‘কালি’ দিয়ে লিখেছেন, ‘আরাকানসংখ্যাটি পড়ে আমার চোখ থেকে যত অশ্রু ঝরেছে; প্রতিটি ফোঁটা যদি মুক্তা হতো! প্রতিটি মুক্তা আমি মুহাজিরীনের খেদমতে দান করতাম!

আহ, শান্তি! এমন মমতাময়ীও আছেন আমাদের দেশে! আমার পুষ্প ধন্য এমন মমতাময়ীর স্পর্শ লাভ করে! ভাবতে ভালো লাগে, আলকুদ্সসংখ্যাটি ইনশাআল্লাহ পেয়ে আরো খুশী হবেন।

হয়ত এই সব গায়েবানা দু‘আর বরকতেই আল্লাহ কিছু তাওফীক দান করছেন। এমন অসুস্থতার মধ্যেও কলম সচল রয়েছে। আজ দু’দিন বিছানায় পড়ে আছি! তায়াম্মুম করে বসে নামায আদায় করছি। এর মধ্যেও আলকুদ্স-এর কাজ আল্লাহ চালিয়ে নিচ্ছেন! শুধু আমার মাওলার করম!!

১৯-৪-৩৯ হি.

একজন লিখেছে, ‘তিনি আমাদের দেশের জন্য ইলমের বাতিঘর। বাতিঘর হচ্ছে মুশাব্বাহ বিহী, আর ব্যক্তিটি হচ্ছেন মুশাব্বাহ। যোগসূত্র বা ওয়াজহুশ্-শাবাহ হচ্ছে, যে পথ চেনে না তাকে পথপ্রদর্শন, তার জন্য দিকনির্দেশন। সুন্দর। কিন্তু , প্রত্যেক তাশবীহ-এর নিজস্ব, মেজায বা প্রকৃতি থাকে। সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়। ইলমের মশাল/ মিনার/তারকা/ আলোকবর্তিকা, এগুলো এক্ষেত্রে যেমন উপযোগী, বাতিঘরটি তেমন নয়।

পত্রিকায় দেখি, একজন লিখেছেন, জেরুসালেম তুমি কার? এটা হচ্ছে কৌতুকধর্মী শিরোনাম। শোকাবহ বিষয়ের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বা প্রয়োগ পীড়াদায়ক।

শব্দচয়ন, এক্ষেত্রে রুচিটা মনে হয় আমাদের দুর্বল থেকেই যাচ্ছে। এমনিতেও বোঝা যায়, কেমন দৌড়ের উপর লিখছে সবাই। সর্বক্ষেত্রে, বিশেষ করে কলমের ক্ষেত্রে ধীর-স্থিরতার প্রয়োজন।

২২-৪-৩৯ হি.

এবারের ‘...তামীমী ও মালালা’ লেখাটি তৈরী করেছি নয়াদিগন্তে ২৯/১২/১৭ পৃ ৫এ প্রকাশিত একটি লেখার সাহায্য নিয়ে। যারা লেখা শিখতে চায় তাদের বলবো, ঐ লেখাটি সংগ্রহ করে দু‘টো লেখা মিলিয়ে দেখার জন্য। আশা করি, অনেক ফায়দা হবে। তারপর যদি কেউ এর উপর ভিত্তি করে নিজের অনুভব অনুভূতি লিখে পাঠায় তাহলে তো অনেক ভালো হয়।

বুঝতে পারছি না, প্রতীক্ষায় থাকবো কি না! অতীতের অভিজ্ঞতা তো খুব সুখকর নয়।

২৭-৪-৩৯ হি.

এ সংখ্যার কলেবর বেড়েই চলেছে। চেষ্টা করেও সীমার মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। আসলে আলকুদসের জন্য উম্মাহর অশ্রু ও রক্ত এত ঝরেছে যে, কয়েক ফোঁটা সম্পর্কে লিখতে গেলেও ...

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা