আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

প্রথম পাতা

সম্পাদকীয়

দিনে দিনে জমেছে বহু, এ বা র দি তে হ বে মা শু ল!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

শেষপর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর হৃদপিণ্ড বরাবর ধারালো খঞ্জরটা বসিয়েই ছাড়লেন! মার্কিন প্রেসিডেন্ট শেষপর্যন্ত বিস্ফোরণ ও ধামাকা ঘটিয়েই ক্ষান্ত হলেন!! ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষপর্যন্ত দুঃসাহসটা করেই ফেললেন!! আমাদের বাইতুল মাকদিস ইহুদিদের দিয়েই দিলেন!! আমাদের প্রাণপ্রিয় আলআকছা অভিশপ্তদের হাতে তুলেই দিলেন!!

কীভাবে সম্ভব হলো!

তার মনে কি কোন আশঙ্কাই জাগেনি!! একবারও কি ভাবেননি, মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে কেমন রক্তক্ষরণ হতে পারে! কী ভয়ঙ্কর ঘৃণা ও ধিক্কার সৃষ্টি হতে পারে!! কী ভূমিধ্বস প্রতিক্রিয়া হতে পারে!! কী সর্বনাশের আগুন জ্বলে উঠতে পারে মুসলিমবিশ্বজুড়ে এবং ছড়িয়ে পড়তে পারে সারা বিশ্বে!!

একবারও কি তার মনে এ ভয় আসেনি, আগুন নিয়ে খেলার পরিণাম হতে পারে কত ভয়ঙ্কর! খুলে যেতে পারে পুরো বিশ্বের জন্য জাহান্নামের এমন দুয়ার, যেখান থেকে ধেয়ে আসবে সন্ত্রাসের নতুন নতুন ‘ডিনামাইট’! ধ্বংসযজ্ঞের অকল্পনীয় বীভৎসতা!!

একবারও মনে হয়নি?! কেন মনে হয়নি?!

স্বীকার করি, মুসলিম উম্মাহর কোন দুর্বলতা, কোন যখম আজ আর পুশিদা নেই! স্বীকার করি, তিনি ভালোভাবেই জেনে গেছেন, আমাদের কোন দুর্গ আর সুরক্ষিত নেই!! কোন ভূখণ্ড আর নিরাপদ নেই!! আমাদের তলোয়ারে ধার নেই, বন্দুকে বারুদ নেই!!

হাতে শক্তি, দিলে সাহস, গুর্দায় হিম্মত কিছুই নেই, জেহাদের জাযবা নেই, শাহাদাতের তামান্না নেই!! আমাদের আজ কিছুই নেই। এমনকি নেই বেঁচে থাকার, টিকে থাকার শেষ অবলম্বন নিজেদের মধ্যে অটুটু ঐক্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব!! সব হারিয়ে আজ আমরা নিঃস্ব! বিশ্বসভায় আমরা আজ সবার করুণার পাত্র!!

আপনি সব জেনে গেছেন মিস্টার ডোনাল্ড! কোন কিছু আপনার অগোচরে নেই মিস্টার ট্রাম্প!!

কিন্তু একটা কথা কি আপনার জানা নেই!! আমাদের বড় বড় রাজধানীতে আলীশান প্রাসাদে যারা বাস করে, মুসলিম উম্মাহর তারা অতি ক্ষুদ্র অংশ! বরং শত কোটি মুসলিম উম্মাহর  স্রোতধারা থেকে তারা বিচ্ছিন্ন!! তারা মুসলিম উম্মাহর না কণ্ঠ, না কণ্ঠস্বর! না মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধি, না মুখপাত্র!!

রিয়াদের প্রাসাদ থেকে কুশনার কী বার্তা নিয়ে গেছে আপনার জন্য?! কিচ্ছু হবে না! কোথাও কোন আগুন জ্বলবে না!! কারো হাতে তলোয়ার ওঠবে না! কোন বারুদের ধামাকা হবে না! সব কিছু মিটে যাবে সহজেই!!

আপনাকে কেউ বলেনি মিস্টার ডোনাল্ড?! কেউ আপনাকে জানায়নি মিস্টার ট্রাম্প!! এখনো এই উম্মাহর সিনায় দিল আছে! এখনো সেই দিলে ধড়কন আছে!! আমাদের বুকে এখনো আছে ঈমানের নিভু নিভু স্ফুলিঙ্গ!! আমাদের ঈমান সুপ্ত, তবে মৃত নয়!!

আমরা ইসলামকে রক্ষা করি বা না করি, ইসলাম এখনো আমাদের রক্ষা করে! যুগের সকল দুর্যোগে ইসলাম এখনো আমাদের হেফাযত করে! এত সহজ নয় মুছে ফেলা নাম নিশান আমাদের! যামানা বহু ইমতেহান নিয়েছে আমাদের!!

***

ইয়া মুসলিম! ইয়া আরব! ইয়া আজম!! এবার তো দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে, আর কিসের ইনতিযার!! এবার তো রুখে দাঁড়াও!! এবার তো জেগে ওঠে হুঙ্কার দাও!!

কিসের লোভ? জীবনের! কিসের ভয়? মৃত্যুর!! স্মরণ করো ছিদ্দীকে আকবার রা.-এর সেই অমর উপদেশ ‘মৃত্যুর আকাক্সক্ষা করো, জীবন প্রাপ্ত হবে!!’

স্মরণ করো আল্লাহর তলোয়ার খালিদ ইবনুল ওয়ালীদের সেই ঈমানদৃপ্ত ঘোষণা, ‘তোমাদের কাছে শরাবের পেয়ালা যত প্রিয়, মৃত্যু আমাদের কাছে তার চেয়ে প্রিয়’!

হাঁ, এভাবেই তারা বিশ্বের কাছে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরেছিলেন। তদানীন্তন বিশ্ব, তথা রোম ও পারস্য এভাবেই তাদের চিনেছিলো!! এজন্য তাঁরা ছিলেন নির্ভয়! দুশমন ছিলো ভয়ে কম্পমান!! তাঁরা এগিয়ে গিয়েছেন অকুতোভয়ে, দুশমন পালিয়েছে ময়দান ছেড়ে মৃত্যুর ভয়ে।

আবার ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের জীবনে সেই ঈমান, সেই বল, সেই তেজ, সেই শৌর্য-সাহস!!

***

আমি বলছি না, আমাদের এখন তলোয়ার হাতে নিতে হবে, অস্ত্রের জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে!! আমি বলছি না, হে তরুণ, হে যুবক, হে জোয়ান, আল্লাহর আমানত এ তাজা প্রাণের তুমি অপচয় করো! আমি বলছি না, তুমি আত্মঘাতী হও। না, কিছুতেই না। এটা তো শত্রুর ফাঁদ! তোমার জান যায়, দুশমন হয় লাভবান!!  কার কী লাভ হলো, কার কী ক্ষতি হলো, এই যে বাংলাদেশী ছেলেটা আমেরিকার মাটিতে আত্মঘাতী হলো?! প্রতিটি তাজা প্রাণের এখন সঠিক ব্যবহারের প্রয়োজন! আমি বলতে চাই আমার রক্তের, আমার আত্মার প্রতিটি ‘প্রাণকণিকা’কে! জাগ্রত হও! ঈমানের বলে বলীয়ান হও! জীবন-মৃত্যুর লোভ ও ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে যাও!! দুশমন যদি শুধু বুঝতে পারতো, প্রাসাদের বাসিন্দা-গুলোর, জীবনের প্রতি লোভ নেই; সম্পদ ও মসনদের প্রতি লিপ্সা নেই এবং নেই মৃত্যুর ভয়, তাহলেই অর্ধেক কাজ হয়ে যেতো! বাকি অর্ধেকের জন্য নিজ নিজ ক্ষেত্রে যোগ্যতা অর্জন করো। সেই যোগ্যতাকে উম্মাহর খিদমতে, সর্বপ্রকার লোভলালসা ও চাহিদার ঊর্ধ্বে উঠে উম্মাহর খিদমতে নিয়োজিত করো। দুশমনকে ইনশাআল্লাহ ভয় পেতেই হবে, পিছু হটতেই হবে।

দরদ নিয়ে, ব্যথা নিয়ে, তোমার প্রতি কল্যাণকামনার প্রেরণা থেকে যা সত্য ভেবেছি তা বলে দিয়েছি। কাল তো বলবে না, কেউ আমাদের বলেনি?!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা