আরাকান সংখ্যা (৩/১)

প্রথম পাতা

কোরআনের আলো / হাদীসের আলো

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

কোরআনের আলো 

বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহীম

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, আর কী হইয়াছে তোমাদের যে, তোমরা লড়াই করিতেছ না আল্লাহর রাস্তায়, অথচ দুবর্ল নর, নারী ও শিশুরা ফরিয়াদ করিতেছে যে, আয় রাব্ব, আমাদের বাহির করুন এই জনপদ হইতে যাহার অধিবাসিরা অত্যাচারী। আর আমাদের জন্য নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ হইতে কোন অভিভাবক এবং নির্ধারণ করুন আমাদের জন্য আপনার পক্ষ হইতে কোন সাহায্যকারী।

ফায়দা
এই আয়াতটি হিজরতপরবর্তী মক্কায় থাকিয়া যাওয়া মুসলমানদের অবস্থার প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ, তবে ইহার আবেদন ও শিক্ষা সর্বযুগের উম্মতের জন্য এবং সর্বপক্রার প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য। ছাহাবা কেরাম ও নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা হইতে মদীনায় হিজরত করিলেন। তখন মক্কায় কিছু মুসলিম রহিয়া গেল। অর্থনৈতিক দুবর্লতা এবং অন্যান্য মজবূরির কারণে তাহাদের পক্ষে হিজরত করা সম্ভব হইতেছিল না। কোরাইশ এই দুবর্ল মুসলিম নর, নারী, শিশু- বৃদ্ধদিগের উপর ইচ্ছামত নির্যাতন করিত। কারণ বিত্তে, প্রতিপত্তিতে তাহারা ছিলেন এতই সাধারণ স্তেরর যে, তাহাদের পক্ষে কথা বলিবারও কেহ ছিল না।
কোরাইশের পাশবিক নিষ্ঠুরতা ও নির্যাতনে ঐ দুবর্ল মুসলিমগণ যখন একেবারে দিশাহারা হইয়া পড়িতেন তখন এইভাবে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করিতেন যাহা আয়াতে বর্ণিত হইয়াছে। তাফসীরবিশেষজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম বলেন, আলোচ্য আয়াত প্রমাণ করে যে, কোন যুগে কোন অঞ্চলে কোন মুসলিম জনগোষ্ঠী যদি কাফিরদের দ্বারা এরূপ নির্যাতনের শিকার হয়, আর তাহারা সাহায্যের জন্য ফরিয়াদ করে তখন তাহাদিগকে কাফিরদের জুলমু নির্যাতন হইতে উদ্ধার করিবার জন্য জিহাদ করা অন্য সকল মুসলমানের উপর এবং মুসলিম রাষ্ট্রশক্তির উপর ফরয, বা অবশ্যকর্তব ্য। এই কর্তব্যে অবহেলা করা আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ক্রোধের কারণ। যখন মুসলমানদের শক্তি ছিল, প্রভাব ছিল, প্রতিপত্তি ছিল এবং ঈমান ছিল, জিহাদের জোশ ও চেতনা ছিল, ছিল আল্লাহর সাহায্য ও মদদের উপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা তখন একে তো কোন কাউমের সাহসই ছিল না তাহাদের দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর যুলমু নির্যাতন করার। আর যদি কখনো কেহ এই রূপ ধৃষ্টতা প্রদর্শন করিত তখন মুসলিমগণ তাহাদের সাহায্যে ছুটিয়া যাইতেন এবং জিহাদে ঝাঁপাইয়া পড়িতেন যতক্ষণ না কাফিররা শায়েস্তা হইত এবং মুসলিমগণ উদ্ধারপ্রাপ্ত হইতেন।
সে ছিল এক যুগ, আর এখন আসিয়াছে কী যুগ! ব্যস, আল্লাহ পানাহ!!
আলকোরআন সম্পর্কে
কোরআন আমাদের সবার জন এক চিরন্তন জীবননির্দেশিকা। জীবনের সকল সমস্যার সমাধান দিতে কোরআনই শুধু পারে। তাই যে কোন সমস্যায় আমাদের প্রথম ও শেষ কতর্ব্য্য হলো কোরআনের শরণাপন্ন হওয়া। মত্য্যৃভুভয় আজকের মসুলিম জাতির সবর্পক্রার লাঞ্ছনা ও যিল্লতি কারণ। আমাদের অন্তর হতে মত্যুভয় দূর হতে পারে যদি আমরা এই আয়াতের মর্ম অনুধাবন করতে পারি, ‘যদিও বাস কর তোমরা মজবতূ কোন দুর্গে।’

হাদীসের আলো

হযরত নু‘মান বিন বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, পরস্পর মায়া-মমতা ও সহমর্মিতার ক্ষেত্রে মুমিনীনের মিছাল হইল একটি দেহের মত। একটি অঙ্গ যখন পীড়িত হয়, সমস্ত অঙ্গ তাহার কষ্টে সাড়া দেয় বিনিদ্রা ও কষ্টভোগ দ্বারা। (মুসলিম)

 ফায়দা
অভিন্নতা ও একাত্মতা বুঝাইবার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হইল একটি দেহ। দুইজন মানুষের মধ্যে যতই অভিন্নতা ও একাত্মতা হউক, কখনো তাহা একটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অভিন্নতা ও একাত্মতার সঙ্গে তুলনীয় হইতে পারে না। পাঁচজন মানুষে হয়ত অনেক অন্তরঙ্গতা ও একাত্মতা আছে, কিন্তু চরম বিপদের সময় পরস্পর হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া যাওয়া এবং একে অপরকে ফেলিয়া পলায়ন করা কিছুমাত্র বিচিত্র নহে। কিন্তু একটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষেত্রে ইহা কল্পনা করাও সম্ভব নহে। এই কারণেই আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন মর্মসমৃদ্ধ ও অলঙ্কারমণ্ডিত উপমা উপস্থাপন করিয়াছেন। জগতের কোন জ্ঞানী, গুণী ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি কি এই রূপ উদাহরণ বলিতে পারিয়াছে?! এই হাদীছ দ্বারা উদ্দেশ্য হইল উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করা যাহাতে তাহারা বিপদে দুর্যোগে পরস্পরের প্রতি অন্তরে সহানুভূিত ও সহমর্মিতা পোষণ করে। যে অঞ্চলের, যে ভাষার এবং বর্ণ ও গোত্রের হউক মুসলমানমাত্রই অপর মুসলমানের জন্য দেহের একটি অঙ্গের মত অভিন্ন ও অবিচ্ছেদ্য। তো দেহের একটি অঙ্গ অসুস্থ, বা বিপদগ্রস্ত হইলে অন্যান্য অঙ্গ যেমন নির্লিপ্ত থাকিতে পারে না তেমনি এক মুসলমান অন্য মুসলমানের এবং এক মুসলিম জনগোষ্ঠী অপর কোন মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিপদে নির্লিপ্ত থাকিতে পারে না। সর্বশক্তি দিয়া সে তাহার বিপদগ্রস্ত মুসলিম ভাইয়ের সাহায্যের জন্য ঝাঁপাইয়া পড়িবে, যতক্ষণ না তাহার বিপদ র হয়। মুসলমানদের সোনালী যুগে ইহাই ছিল তাহাদের পারস্পরিক সম্পর্কের অবস্থা। যখন জানা যাইত যে, আমার অমুক মুসলিম ভাই বিপদগ্রস্ত তখন প্রত্যেকে তাহার জন্য অস্থির হইয়া পড়িত এবং বেচায়ন বেকারার হইয়া তাহার সাহায্যে ছুটিয়া আসিত। ব্যক্তি জীবনেও ছিল এই অবস্থা, সমষ্টির জীবনেও ছিল একই অবস্থা। আজ আমরা কী দেখিতেছি?! আমার পড়শি বিপদগ্রস্ত, কিন্তু আমার আনন্দ বিনোদনে কোন কমতি নেই! অথচ এই রূপ বিপদ আমারও হইতে পারে। তখন আমি কী কামনা করিব একবার চিন্তা করা উচিত। আজ আমাদের আবার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করিতে হইবে যে, পৃথিবীর যে কোন স্থানের মুসলিম ভাইয়ের প্রতি একদেহের একাত্মতা অনুভব করিব। তাহার বিপদে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিবে, আমার চোখে অশ্রু ঝরিবে। তাহার বিপদে অবশ্যই আমি তাহার পাশে দাঁড়াইব যতক্ষণ না তাহার বিপদ দূর হয়। আল্লাহ আমাদিগকে তাওফীক দান করুন, আমীন।
বিশ্বনবী সম্পর্কে
আজ আমরা শত্রুর মনোরঞ্জনের জন মডারেট ইসলামের কথা বলি, কিন্তু শত্রুর মন কি কিছুমাত্র জয় করতে পেরেছি! মডারেট হওয়ার প্রস্তাব তো কোরাইশও আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করেছে। কিছু ছাড় তারা দেবে, কিছু ছাড় তিনি  দেবেন। কী ছিলো আমার পেয়ারা নবীর জবাব। সেই জবাবই আজ আমাদের দেয়া উচিত সভ্যতাগর্বী পৃথিবীর সবর্জাতি ও সম্প্রদায়কে। আমাদের জনপদ জালাবে পোড়াবে, তোমাদের হাতে আমাদের রক্ত ঝরবে, আর আমরা মডারেট সেজে বসে থাকবো? না, মশায় না!


শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা