শাবান ১৪৩১হিঃ (১৭)

রসের কলমদানি

কথার খৈ ভাজা সহজ তব

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট
পেয়ারে বেরাদারান! আমার সম্পর্কে তোমরা এখন কী ভাবিতেছ তাহা বড় কথা নহে, বড় কথা হইল আমি এখন তোমাদের সম্পর্কে কী ভাবিতেছি! আসল কথা কি জান, এই সব ভাবাভাবি তখনই শুরু হয় যখন হাতের কাছে করিবার মত কোন কাজ থাকে না। যাহাদের কাজ আছে তাহাদের ভাবিবার অবসর থাকে না। তো বর্তমানে যেহেতু আমাদের কাহারও পকেটে টাকা নাই, বাজারে চাল-ডাল নাই, লাউ-বেগুন, ইলিশ মাছ নাই ... এই দেখো, তোমাদের এই এক দোষ! ঘটে বুদ্ধি নাই, জানি না বুঝ কি ছাই, কথার মাঝখানেই শুরু কর হৈচৈ। নাই বলেছি তো মিথ্যা বলেছি! পকেটে যাহাদের কড়ি নাই তাহাদের জন্য মিয়াঁ ভাই, ভরা বাজারেও কিছুই নাই। প্রমাণ চাও? ইলিশের বাজারে, বল না গিয়া, ‘মেছো ভাই! গত বৈশাখে পান-া পেয়েছি দু'লোকমা, মগর ইলিশ জুটে নাই একটুকরা। বিবি সাহেবার চেহারায় এখনও তাই কাল- বৈশাখির আঁধার। তো মেছো ভাই, ছোটখাটো, মানে ঐ যে দুই কেজি সাইজের, ঐটা না, তার পাশে ঐ যে জাটকা সাইজের, ঐ ইলিশটা কি সামান্য একটু সস-ায় পেতে পারি! তখন যদি তোমার ঐ জাটকা সাইজের ইলিশের দাম শুনে মাথার চান্দি গরম না হয়, আর ভূপাতিত না হও, তবে আর কী বলিব, আমাকে গোলাম হোসেন ডাকিও। কিন' মিয়াঁ ভাই, আসল সমস্যা তো তোমার সামনে! ঘরে ফিরিয়া বিবি ছাহেবাকে কী বুলিয়া বুঝ দিবে, ‘হাচা কতা না মিছা কতা!’। তোমার স'ানে আমি হইলে নির্ঘাত মুখখানা কাচুমাচু করিয়া বলিতাম, নাহ, বাজারে ইলিশ পাওয়া গেল না! তো মিয়াঁ ভাই, এই বার বুঝিয়াছ আমার কথার মতলব, ‘পকেটে টাকা নাই মানে, ভরা বাজারেও কিছু নাই। সুতরাং না বুঝিয়া কথার মাঝখানে আবার যেন গোলমাল বাঁধাইও না। তাহাতে আমার দেমাগের চিন-া করিবার ‘ক্যাপাসিটি’ কমিয়া যায় এবং কথার খেই হারাইয়া যায়। যাক ভালই হইল, খেই হইতে ‘খই’-এর কথা মনে পড়িল। ভাল হইল কী ভাবে? আমার বলিতে হইবে না, নিজগুণে তুমি নিজেই বুঝিতে পারিবে! খয়ের! কী যেন বলিতেছিলাম! হাঁ, নাই, নাই এবং নাই। পকেটে পয়সা নাই, বাজারে মাছ নাই, ঘরে বিদ্যুৎ নাই, বাইরে কারেন্ট নাই, মনে শানি- নাই, অন-রে দুঃখ নাই, কত কিছু যে নাই! এমনকি হাতের কাছে করিবার মত উপযুক্ত কোন কাজও নাই। আর দেশের লোকে বলে, ‘নাই কাজ তো খই ভাজ!’ নাহ, চন্দ্রবিন্দুটা ইদানিং বড্ড জ্বালাতন করছে দেখি! খই ভাজিতে চন্দ্রবিন্দু লাগে কি না, খোঁজ-খবর নিয়ে আমাকে জানিয়ো তো! যাই বল মিয়া ভাই, গ্রামের বুড়ারা বড় উত্তম পরামর্শ দিতে পারে! যাহাদের কোন কাজ নাই তাহাদের জন্য খই ভাজার চেয়ে উত্তম কাজ আর কী হইতে পারে। তোমরা আবার গোলমাল করিয়ো না! গ্রামের নিরীহ বুড়াদিগকে প্রশ্ন করিয়া পেরেশান করিয়ো না যে, খই ভাজিতে ধান লাগে, আর ধান কিনিতে লাগে পয়সা, আর পয়সা তো নাই! সুতরাং ঘটনা কী হইল! খাড়া বড়ি থোড়, থোড় বড়ি খাড়া! না মিয়াঁ ভাই! আমার কাছে বুদ্ধি আছে! ধান ছাড়া খৈ ভাজা কোন ব্যাপার না! ধানের খৈ ভাজিতে না পার কথার খৈ ভাজ। আর তোমার মুখের জিহ্বা, মাশাআল্লাহ, এমনই এক আজব মেশিন! সারা দিন যত ইচ্ছা কথা উৎপাদন কর, না লাগে পয়সা, না লাগে ট্যাক্স! হাঁ, সামান্য একটু সমস্যা অবশ্য আছে, আখেরাতে নাকি জিহ্বার হিসাব কিতাব আছে! কিন' সেটা তো বর্তমানের সমস্যা নহে, ভবিষ্যতের সমস্যা! কলেজ ম্যানেজমেন্ট এত বড় শিক্ষামন্ত্রীকে ম্যানেজ করিতে পারে, আমরা শুধু বাম কাঁধের একটা ফিরেশতাকে ম্যানেজ করিতে পারিব না! আচ্ছা ধর, ফিরেশতাকে ম্যানেজ করা গেল না। শিক্ষামন্ত্রীর বউ-বাচ্চা আছে, দুনিয়াদারি আছে, সাধ-আহ্লাদ আছে, ইডেন-ফিডেন কত কিছু আছে! বেচারার জরুরতের কি শেষ আছে! সুতরাং তাহাকে ম্যানেজ করা অত কঠিন না। যিনি ম্যানেজ হইবার জন্য তৈয়ার তাহাকে ম্যানেজ করা কোন ব্যাপার না। কিন' ফিরেশতা, তাহাদের তো বউবাচ্চা নাই, এমনকি মনের ভিতরের কোণাকাঞ্চিতেও সাধ-আহ্লাদ বলিতে কিচ্ছুটি নাই! তো যদিও তুমি সর্বপারঙ্গম বাঙ্গালী, কুয়েতি পুলিশকেও পিঠে হাত বুলাইয়া বশ করিবার হিম্মত তোমার আছে, তবু সম্ভবত বাম কাঁধের ফিরেশতাকে ম্যানেজ করা তোমার পক্ষেও সহজ হইবে না। তো কী করা যায়! চিন-া নাই মিয়াঁ ভাই, চিন-া নাই! আমি গোলাম হোসেন বাঁচিয়া থাকিতে তোমার চিন-া নাই এবং মুক্তি নাই। কারণ আমার বুদ্ধির অভাব নাই। যখনই তোমাদের দেমাগে আকল-বুদ্ধির লোডশেডিং শুরু হয়, আমার কাছে চলিয়া আসিও, কিংবা আসিয়া চলিও। আমার কাছে এমনকি দরপত্র এড়াইবার জন্য যুক্তি খুঁজিবার ঝামেলাও নাই। কারণ আমি সম্পূর্ণ জনস্বার্থের খাতিরে একেবারে বিনা মূল্যে যত মেগাওয়াট বুদ্ধির প্রয়োজন উহা সরবরাহ করিতে প্রস'ত আছি, এবং এক পায়ে নহে, উভয় পায়ে খাড়া হইয়া প্রস'ত আছি। তো ফিরেশতাটিকে যদি ম্যানেজ করিতে না পার! তখন অন্য বুদ্ধি আছে। কী সেই বুদ্ধি! ইহা অবশ্য আমার নিজস্ব বুদ্ধি নহে, বুবুজান হইতে প্রাপ্ত বুদ্ধি। দেখ আমি কত বোকা! বুবুজানের কথা কেন বলি! বুদ্ধিটা নিজের বলিয়া দাবী করিতে কী অসুবিধা ছিল! কিন-ু কী করি, এখনো এতটা চালাকি, এতটা কামালিয়াত হাছিল করিতে পারি নাই। নাহ, আমি বোধ হয় কস্মিনকালেও চালাক হইতে পারিব না, যাহাদের হয় নয় বছরেই হয়, যাহাদের হয় না, নব্বই বছরেও হয় না। আমার তো নব্বই হইতে বেশী বাকি নাই, আর মাত্র চল্লিশ বছর! খয়ের! আগের কথায় ফিরিয়া আসি। ঘটনা এই যে, বুবুজান ‘এলিকশনে’ প্রজাদিগকে একটি খোয়াব দেখাইয়াছিলেন, দশটাকা কেজি চাল খাওয়াইবেন। ব্যস কিল্লা ফতে! বুবুজান ইচ্ছা করিলেই বলিতে পারিতেন, ভুখানাঙ্গা প্রজাগণ! তোমাদের জন্য আমার পরাণ এতই কান্নাকাটি করে যে, আমি তোমাদিগকে চাল খাওয়াইব একেবারে মুফতে! বুবুজান বলিতে পারিতেন, কারণ তাহার সেই ‘ক্ষেমতা’ ছিল। তিনি ত সর্বদা আলাদিনের চেরাগ হাতে ঘুরা ফেরা করেন। কিন' তিনি ম্যাডামের উপর দয়া করিয়া মুফতের কথা বলেন নাই। দশটি টাকার কথা বলিয়াছেন। খয়ের! এলিকশন পার হইল, চালের দাম লাফাইতে লাগিল, আর বুবুজান বলিতে লাগিলেন, মা-বাবার কিরা কসম, কস্মিনকালেও আমি দশটাকার কথা বলি নাই। ইহা দুষ্টু লোকের অপপ্রচার। মারহাবা! তো বুবুজান হইতে আমি এই বুদ্ধি হাছিল করিলাম যে, বাম কাঁধের ফিরেশতা যদি জিহ্বার হিসাব কিতাবে কড়াকড়ি করে, তবে সোজা বলিয়া দিব, কস্মিন- কালেও আমি এই গুলা বলি নাই। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে এই গুলা লেখা হইয়াছে! ফিরেশতা ছাহেব, তখন টের পাইবে, বাঙ্গালী কাহাকে বলে! এই দেখ, নৌকার যামানায় কথার নৌকায়, কলমের বৈঠা দিয়া কোথা হইতে কোথায় ভাসিয়া গেলাম। খায়ের, চল ফিরিয়া আসি আগের কথায়। তো খৈ ভাজিবার জন্য যদি বাজারে ন্যায্য মূল্যে ধান পাওয়া না যায়, কোই ফিকির নেহী। আমার নিকটে আইস এবং আরাম করিয়া বইস। আমি একেবারে মুফতে ..! নাহ, বুবুজান যদিও মহিলা তবু এই সব জটিল ক্ষেত্রে তিনিই আমার ইমাম। তাহাকেই আমি অনুসরণ করিব। মুফতে নহে, মাত্র দশটাকা কেজি দরে তোমাদিগকে আমি জিহ্বার মেশিন হইতে উৎপাদিত কথা সরবরাহ করিব। তোমরা আল্লাহ ভরসা করিয়া মনের সুখে কথার খৈ ভাজিতে থাক। তবে সাবধান, দশটাকা কেজি বলিয়া কথার খৈ ভাজিতে গিয়া জিহ্বার লাগাম একেবারে ছাড়িয়া দিও না। মরদ-আওরাতের শরীয়তি পার্থক্যের কথা এক্কেবারে ভুলিয়া যাইও না। উপর-নীচকে নীচ-উপর করিয়া ফেলিও না। কে জানে, তখন হয়ত বাম কাঁধের ফিরেশতাকে বুবুজানের বুদ্ধিতেও বশ করা যাইবে না! আচ্ছা, এই মাত্র একটি কাজ পাইলাম, যদিও ছোটখাট কাজ, তবু তো কাজ! সুতরাং এখন কথা খই ভাজা বন্ধ। ফী আমানিল্লাহ!
শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা